স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের মতোই মহিলাদের অবদান অনস্বীকার্য। পুরুষের কাঁধে কাঁধ রেখে সমানভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়ে গেছেন ভারতের বীরাঙ্গনারা। তার বিনিময় স্বীকৃতি হয়তো পেয়েছেন কিন্তু পুরুষের তুলনায় তা অত্যন্ত নগণ্য। ননীবালা দেবী তেমনই একজন মহীয়সী নারী। যিনি শত অত্যাচারের পরেও ইংরেজের সামনে মুখ খোলেননি। অকথ্য অত্যাচার এমনকি গোপনাঙ্গে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছিল ননীবালার। ননীবালা দেবীর নাম আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে ভারতের ইতিহাসে।
ননীবালা জন্ম হয়েছিল হাওড়া জেলার বালি শহরে। মাত্র 15 বছর বয়সেই ননীবালা বিয়ে হয়। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর বাপের বাড়িতেই ঠাঁই হয় “অপয়া” ননিবালার। পড়াশোনা করার ইচ্ছা থাকলেও বাবার অমতে ঘর বন্দী থাকতে হয় বিধবা মেয়েকে। কিন্তু হাজারো বাধা অতিক্রম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আড়িয়াদহ মিশনে ভর্তি হন ননীবালা। তবে তাঁর মনে বিপ্লবের বীজ রোপণ করেছিলেন তাঁর ভাইপো প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ১৯১৫ সালে বিপ্লবী রামচন্দ্র মজুমদার, জেলবন্দি হন। রামচন্দ্রের স্ত্রী সেজে গোপন তথ্য আনতে আলিপুর জেলে প্রবেশ করেন ননীবালা। সেসময় চন্দননগরে ছিলেন ননীবালা দেবী। এদিকে ইংরেজ পুলিশের তাড়া খেয়ে ননীবালা ঘরে আশ্রয় নেন তরুণ বিপ্লবীরা। খবর পেয়ে পুলিশ আসলেও দরজায় দাঁড়িয়ে তাদের মুখোমুখি হয়ে বিপদ এড়ান এই মহিলা।
তবে ছাইচাপা আগুন কি বেশি দিন আটকে রাখা যায়? প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, বীণা দাস, নেলি সেনগুপ্তাদের মত ননীবালার নাম উঠে যায় ইংরেজদের সন্দেহের তালিকায়। ইতিমধ্যে কলেরায় আক্রান্ত হন ননীবালা। তাঁকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয় বেনারস জেলে। সেখানে তাঁর উপর শুরু হয় বলপূর্বক অত্যাচার। ননীবালার মুখ থেকে বিপ্লবীদের গোপন তথ্য জানার জন্য তাঁকে ইলেকট্রিক শক ,এমনকি গোপনাঙ্গে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে দেওয়া হয়। তাঁকে খেতে পর্যন্ত দেওয়া হতো না। কিন্তু দমে যাননি ননীবালা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে রাজবন্দীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ননীবালাও ছাড়া পান। কিন্তু বাপের বাড়িতে তাঁকে মেনে নেন নি কেউ। কোন রকমে সরকারের পেনশন দিয়ে সংসার চলত। রোগ ব্যাধিতে জর্জরিত হয়ে শেষ জীবনটা কাটিয়ে ছিলেন ননীবালা।
আজ দেশের ছাত্রছাত্রীরা ননীবালা দেবীর অবদানের কথা জানতে পারেন। কিন্তু সত্যিই কি পুরুষ সংগ্রামীদের মত মহিলাদের একাসনে ঠাঁই পেয়েছেন? শত অত্যাচার আর অপমান সহ্য করেও শক্ত হাতে যিনি স্বাধীনতার হাল ধরেছিলেন তিনি ননিবালা দেবী।